*প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন আমাদের সাথে * বিসিএস পরীক্ষা এর প্রস্তুতি নিন আমাদের সাথে* আনলিমিটেড টেস্ট রয়েছে আপনার জন্য এই ব্লগে * নতুন ও আপডেট তথ্য পেতে পাশের "follow/অনুসরণ" বাটনে ক্লিক করুন * নিজেকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করুন * আপনার শিশুকে কাব কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করুন * আপনার বাড়ি, বিদ্যালয়, অফিসের আঙ্গিনায় সবজির বাগান করুন, নিরাপদ ও বিষ মুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন * করোনার কমিউনিটি স্প্রেইডিং রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন * অযথা পাড়া বেড়ানো, চায়ের দোকানে আড্ডা পরিহার করুন * পরিবারে অধিক সময় দেয়ার চেষ্টা করুন * ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন *

শরীরের সীমানা

Muhammad Abul Bashar Khan
.

জন্ম থেকে অদ্যবধি শিখছি। নিজেকে সমৃদ্ধ করছি। পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্ত তোলপাড় করে লুকিয়ে থাকা সকল কিছুর জ্ঞান আহরণ করার চেষ্টা করছি। জ্ঞানার্জনের জন্য অর্থ ও সময় ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য নেই আমাদের। একবারের জন্য কি কখনো নিজেকে জানার আগ্রহ জন্মেছে? হয়তো এখনই সেই আগ্রহ সৃষ্টি হলো। তাহলে দেরি কেন? জেনে নিই নিজের শরীরের সীমানা। 

জীবনের অতিক্ষুদ্রতম অংশের নাম হলো কোষ। প্রতিটি মানুষের শরীর  ত্রিশ ট্রিলিয়ন কোষ নিয়ে গঠিত। এক একটি কোষ এক এক রকম কাজ সম্পাদন করে থাকে। কিছু কিছু কোষ সম্মিলিতভাবে একটি কাজ করে থাকে। এ কারনে এই একই ধরনের কোষ সমস্টিকে টিস্যু বলা হয়। আবার কতগুলো টিস্যু সম্মিলিতভাবে একটি কাজ করে এবং এদের একত্রে বলে অঙ্গ। আবার কতগুলো অঙ্গ একত্রে একই কাজ করে এবং এই অঙ্গগুলোকে একত্রে বলে তন্ত্র। আর কতগুলো তন্ত্রের সমন্বয়ে মানুষের দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন হয়ে থাকে।
মানুষের দেহ মোট এগারোটি অঙ্গতন্ত্র নিয়ে গঠিত। এই অঙ্গতন্ত্র বা Organ system গুলো হলো-

  • ত্বকতন্ত্র বা Integumentary system,
  • পেশীতন্ত্র বা Muscular system,
  • কংকালতন্ত্র বা Skeletal system,
  • স্নায়ুতন্ত্র বা Nervous system,
  • সংবহণতন্ত্র বা Circulatory system,
  • লসিকাতন্ত্র বা Lymphatic system,
  • শ্বসনতন্ত্র বা Respiratory system,
  • অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র বা Endocrine system,
  • রেচনতন্ত্র বা Urinary/Excretory system,
  • জননতন্ত্র বা Reproductive system এবং
  • পরিপাকতন্ত্র বা Digestive system.  
ত্বকতন্ত্র বা Integumentary system : মানবদেহের বাহিরের আবরণ এবং এর মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন অঙ্গ নিয়ে এই তন্ত্র গঠিত। ত্বকতন্ত্রের অন্তর্ভূক্ত অঙ্গগুলো হলো-


ত্বকতন্ত্রের কাজ : দেহের ভিতরের সকল অঙ্গ ও তন্ত্রকে বাহিরের যেকোনো ধরনের আঘাত অথবা আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা এবং মানুষের একটি নির্দিষ্ট আকৃতিদান এর প্রধান কাজ। এছাড়াও ত্বকতন্ত্র আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করে থাকে। তাহলো-


  • দেহের ভিতরের তরল পদার্থকে ধরে রাখা,
  • রোগ জীবানু প্রতিরোধ করা,
  • দেহের ভিতরের বর্জ্য পদার্থ বাইরে বের করে দেওয়া,
  • দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
পেশীতন্ত্র বা Muscular system: শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের সাথে যুক্ত প্রায় ৭০০ ধরনের পেশী নিয়ে এ তন্ত্র গঠিত। মানবদেহের মোট ওজনের অর্ধেক ওজন এই পেশীর ওজন। মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গ ও তন্ত্রের সাথে যুক্ত পেশীগুলো বিভিন্ন পেশীতন্ত্র নামে অভিহিত। যেমন বিভিন্ন হাড়ের সাথে যুক্ত পেশীগুলো কংকাল পেশীতন্ত্র নামে অভিহিত।
   
পেশীতন্ত্রের কাজ: বিভিন্ন অঙ্গের নড়াচড়া তথা মানুষের চলন এই পেশীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। 

কংকালতন্ত্র বা Skeletal system: বিভিন্ন ধরনের হাড় এবং সন্ধি নিয়ে এই তন্ত্র গঠিত। জন্মগ্রহণের পর মানুষের মোট ২৭০টি হাড় থাকে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এ সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ২০৬ এসে থামে। হাড়ের ক্ষয় এবং একটির সাথে অন্যটি মিশে যাওয়ার মাধ্যমে এই হাড়গুলোর সংখ্যা কমে ২০৬ টিতে আসে। বিভিন্ন প্রকার কোষ, প্রোটিন ফাইভার এবং খনিজ পদার্থ নিয়ে কংকাল গঠিত। অস্থি বা হাড়ের ওজন ও ঘনত্ব মানুষের ২১ বছর বয়সে সর্বোচ্চ থাকে।

  কংকালতন্ত্রের কাজ: দেহের নির্দিষ্ট আকৃতিদান এর প্রধান কাজ। দেহের বিভিন্ন কোমল অঙ্গকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করা এবং আশ্রয় প্রদান করা কংকালতন্ত্রের কাজ।

 স্নায়ুতন্ত্র বা Nervous system: বিশেষ ধরনের পেশী কলার সমন্বয়ে মানুষের স্নায়ুতন্ত্র গঠিত। মানুষের স্নায়ুতন্ত্র প্রধান দুইটি অংশে বিভক্ত। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ও প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে রয়েছে ব্রেইন এবং মেরুরজ্জু বা স্পাইনাল কর্ড। প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে রয়েছে নার্ভ। ইহা লম্বা রজ্জুর ন্যায় একটির সাথে একটি যুক্ত হয়ে সাড়া দেহে বিস্তৃত। 

   স্নায়ুতন্ত্রের কাজ: বাহিরের পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তন সনাক্ত করে সেই সংবাদ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতে পৌঁছানো এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ু থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা দেহের নির্দিষ্ট অংশে বা অঙ্গে পৌঁছানো প্রান্তীয় স্নায়ুর কাজ।  দেহের ভিতরের এবং বাহিরের যেকোনো ধরনর পরিবর্তন এর সংবাদ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতে আসার পর তার প্রেক্ষিতে যা করতে হবে তার সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াকরণের কাজ হলো কেন্দ্রীয় স্নায়ুর কাজ। কেন্দ্রীয় স্নায়ু দেহের যাবতীয় কাজের নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। আমাদের চলন, স্থবিরতা, বিশ্রাম, ঘুম সকল কিছুরই নির্দেশনা প্রদান করে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র।  

সংবহণতন্ত্র বা Circulatory system:  এই তন্ত্র তিনটি স্বতন্ত্র সিস্টেম বা তন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত। সিস্টেম তিনটি হলো-

  •  হৃদপিন্ড বা (Cardiovascular system)
  • ফুসফুস বা (Pulmonary system)
  • ধমনী, শিরা, করোনারী এবং পোর্টাল ভেসেল। 
সংবহণতন্ত্রের কাজ: সারা দেহে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে খাদ্য উপাদান, অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বিভি হরমোনের পরিবহণ করাই হলো সংবহণতন্ত্রের কাজ। রক্তের মাধ্যমেই সারা দেহে বিভিন্ন বস্তুর পরিবহন হয়। আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবানুও এর মাধ্যমে ছড়ায়। সুতরাং এই তন্ত্র মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তন্ত্র।

লসিকাতন্ত্র বা Lymphatic system:  লিম্ফ ভেসেল, লিম্ফয়েড অঙ্গ এবং লিম্ফয়েড টিস্যু সমন্বয়ে এই তন্ত্র গঠিত। এটিও রক্ত সংবহন তন্ত্রের ন্যায় সারাদেহে জালের ন্যায় বিস্তৃত। এই তন্ত্রের নালীগুলো পরিস্কার লিম্ফ বা লসিকা তরল পরিবহন করে। এই তরলটি রক্তের শ্বেত কণিকা সমৃদ্ধ। 


লসিকাতন্ত্রের কাজ: এটি মূলত সংবহনতন্ত্র ও ইমিউন সিস্টেম এর অংশ। কোনো রোগাক্রান্ত স্থানে দেহের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত রক্তের শ্বেত কণিকা পরিবহণ করা এর কাজ।

শ্বসনতন্ত্র বা Respiratory system: এই তন্ত্রের প্রধান অঙ্গ হলো ফুসফুস। নাসারন্ধ্র, শ্বাসনালী ও ফুসফুস নিয়ে শ্বসনতন্ত্র গঠিত। ফুসফুসের ক্ষুদ্রতম অংশ হলো এ্যালভিউলাস বা বায়ুকুঠুরী। দেহের বাইরের বাতাস থেকে অক্সিজেন নাসারন্ধ্র, শ্বাসনালী হলে ফুসফুসে আসে এবং তা এ্যালভিউলাসে এলে রক্তনালীর লোহিত রক্তকণিকা অক্সিজেন শোষন করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত করে দেয়। অক্সিজেন সমৃদ্ধ লোহিত রক্ত কণিকা দেহের বিভিন্ন কোষে এই অক্সিজেন পরিবহণ করে।

শ্বসনতন্ত্রের কাজ: দেহের ভিতর ও বাহিরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড আদান প্রদান করা।


অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র বা Endocrine system: এই তন্ত্রের অন্তর্ভূক্ত কতগুলো অঙ্গ রয়েছে যারা কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো নির্দিষ্ট সংবাদ বহন করে এবং তা নির্দিষ্ট স্থানে পরিবাহিত হয়। মানুষের দেহে এই অঙ্গগুলো বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত। মাথায় মস্তিষ্কের পেছন দিকে দুইপাশে পিটুইটারী এবং পিনিয়াল গ্রন্থি নামে দুইটি গ্রন্থি থাকে। গলায়  রয়েছে থাইরয়েড গ্রন্থি। বৃক্কের নিকট রয়েছে এডরেনাল গ্রন্থি এবং প্যানক্রিয়াস। জনন অঙ্গের সাথে যুক্ত পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাশয় এবং স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়। এই গ্রন্থিগুলো থেকে নিঃসৃত রস কোনো নালীর মধ্যে নিঃসৃত হয় না। এ রসকে হরমোন বলে। বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন হরমোন নিঃসরন হয়ে নির্ধারিত স্থানে নির্দিষ্ট কাজের সংবাদ প্রেরণ করে।
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কাজ: বিভিন্ন হরমোন নিঃসরন করা। আর বিভিন্ন হরমোন দেহের বৃদ্ধি, বিপাক এবং জনন অঙ্গের বিকাশ সাধন করে থাকে।

রেচনতন্ত্র বা Urinary/Excretory system: রেচন তন্ত্রের অন্তর্গত অঙ্গগুলো হলো কিডনি, জরায়ু, মূত্রথলী ও মূত্রনালী।
রেচনতন্ত্রের কাজ: রেচনতন্ত্র দেহের বিভিন্ন কাজ করে থাকে- 
  • দেহের তরল বর্জ্য পদার্থ বাইরে বের করে দেওয়া।
  • মূত্র তৈরির মাধ্যমে রক্তে পানির সমতা রক্ষা করা।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
  • রক্তের pH এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।
জননতন্ত্র বা Reproductive system: পুরুষ ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে জননতন্ত্র আলাদা ধরনের। পুরুষের জননতন্ত্রের মধ্যে রয়েছে শুক্রাশয়, শুক্রথলি এবং শিশ্ন। অপরদিকে স্ত্রী জননতন্ত্রের অন্তর্গত অঙ্গ হলো ডিম্বাশয়, জরায়ু এবং যোনি।
জননতন্ত্রের কাজ: পুরুষ জননতন্ত্রের কাজ হলো শুক্র উৎপাদন ও তা ডিপোজিট করা। অপরদিকে স্ত্রী জনন অঙ্গের কাজ হলো ডিম্বানু উৎপাদন ও মানব শিশু জন্মগ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত ভ্রুণকে রক্ষা, পুস্টি সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। 

পরিপাকতন্ত্র বা Digestive system:  মানুষের পরিপাকতন্ত্র Gastrointestinal Tract এবং Accessory Organ নিয়ে গঠিত। Gastrointestinal Tract এর অন্তর্ভূক্ত হলো মুখ, মুখ গহবর, গলবীল, গলনালী, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, মলাশয় ও পায়ু। অপরদিকে Accessory Organ সমূহ যারা খাদ্য পরিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তারা হলো জিহবা, লালাগ্রন্থি, প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়, লিভার বা যকৃত এবং গলব্লাডার বা পিত্তথলী।
পরিপাকতন্ত্রের কাজ: খাদ্য পরিপাকের মাধ্যমে খাদ্যের পুষ্টি উপাদান দেহ দ্বারা শোষিত হওয়ার উপযোগী সরল খাদ্য উপাদানে বিশ্লেষন করা।

No comments:

Post a Comment