*প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন আমাদের সাথে * বিসিএস পরীক্ষা এর প্রস্তুতি নিন আমাদের সাথে* আনলিমিটেড টেস্ট রয়েছে আপনার জন্য এই ব্লগে * নতুন ও আপডেট তথ্য পেতে পাশের "follow/অনুসরণ" বাটনে ক্লিক করুন * নিজেকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করুন * আপনার শিশুকে কাব কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করুন * আপনার বাড়ি, বিদ্যালয়, অফিসের আঙ্গিনায় সবজির বাগান করুন, নিরাপদ ও বিষ মুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন * করোনার কমিউনিটি স্প্রেইডিং রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন * অযথা পাড়া বেড়ানো, চায়ের দোকানে আড্ডা পরিহার করুন * পরিবারে অধিক সময় দেয়ার চেষ্টা করুন * ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন *

COVID-19 কোথায়, কেন এবং কিভাবে আক্রমণ করে?


COVID-19 কোথায়, কেন এবং কিভাবে আক্রমন করে?
    Muhammad Abul Bashar Khan

অস্তিত্ব টের পাওয়ার পর থেকে স্বস্তি নেই কারও মনে হযরত নূহ (আঃ) এর সময়ের মহাপ্লাবনরূপী আল্লাহর গজব পড়েছে পৃথিবীর উপর ভয়ঙ্কর সর্দিজ্বর তারপর শ্বাসকষ্ট এতটাই প্রকট যে কোনো কিছু বুঝে ওঠার বা চিকিৎসা শুরু করার আগেই মৃত্যু তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি যতটা না উন্নত দ্রুত তার চেয়েও দ্রুত রোগের বিস্তার একজনের সংস্পর্শে আরেকজনে সংক্রমণ বুঝে ওঠার এক সপ্তাহ আগেই বাসা বেঁধেছে রোগ দমের সাথে এর চলাফেরা হাঁচিতে আসে, হাঁচিতে যায়, হাঁচিতে ছড়ায় বিশ্বময়
রোগটি প্রথম চিহ্নিত হয় চীনের হুবেই প্রদেশের ওহান শহরে মহামারি আকারে নিউমোনিয়া রোগীর শরীরে প্রথমে তারা রোগের নাম ধরে নিয়েছিল সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (SARS) বলে যা ২০০২ সালে এই চীনেই ভয়ংকর আকার ধারণ করেছিল এবং এই রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের নাম ধরে নিয়েছিল সার্স কভ (SARS CoV) বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনা ভাইরাস ভাইরাস আইসোলেশন কিট ব্যবহার করে যে RNA আইসোলেশন করা হলো তার জেনেটিক কোড আর সার্স কভ এর জেনেটিক কোড একটু ভিন্ন এবার ২০১৩ সালে সৌদি আরবে প্রথম সনাক্তকৃত আরেক মহামারি নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনা ভাইরাস (MERS CoV) এর সাথে মিলিয়েও দেখা গেলো জেনেটিক কোডের ভিন্নতা ফলে এই ভাইরাসের নামকরণ করা হলো সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনা ভাইরাস (SARS CoV 2) এই ভাইরাসটি সনাক্ত করা হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এই সনাক্তকরণের সাল অন্য দুইটি করোনা ভাইরাসের সাথে কিছু স্বাদৃশ্য থাকায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নতুন ভাবে নামকরণ করা হয় নভেল করোনা ভাইরাস-১৯ এবং  রোগের নামকরণ করা হয় কোভিড-১৯ (CoVID-19) বা করোনা ভাইরাস ডিজিস-১৯ রোগের নিদির্ষ্ট কোনো প্রতিকার এখনও আবিষ্কৃত হয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা খরচ করছেন রোগের চিকিৎসা প্রতিষেধক উদ্ভাবনের জন্য নিয়োগ করেছেন পৃথিবীর সেরা সব চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত কিন্তু এরই মধ্যে (১৯/০৪/২০২০ তারিখের মধ্যে) পৃথিবী থেকে ঝরে পড়েছে এক লক্ষ একষট্টি হাজার দুইশত আটষট্টি প্রাণ এই বৈশ্বিক মহামারিতে দিশেহারা আতঙ্কিত মানুষজন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি সুন্দর পৃথিবীতে এখন বেঁচে থাকার আকুতি প্রতিটি মানুষের আরবাঁচতে হলে জানতে হবেএই বাক্যটি এখন প্রতিটি মানুষের চেতনায় হাতুরী দিয়ে পেরেক ঠুকে চলছে অনবরত চেতনার ক্ষতের তীব্র যন্ত্রণা বাধ্য করছে আমাদের রোগ রোগের কারন সম্পর্কে জানতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য জানতে পাচ্ছি আর আমার জানা বিষয়গুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করে চেতনার ক্ষতের যন্ত্রণা কিছুটা ভুলে থাকার চেষ্টা করি প্রথমেই আসি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ রোগের কারন অনুসনধান করে যে ভাইরাসকে দায়ী করেছেন তা যে প্রক্রিয়ায় সনাক্ত করা হয় এর নাম হলো RT-PCR (রিয়েল টাইম-পলিমারেজ চেইন রিয়্যাকশন) সংক্ষেপে আরটি-পিসিআর
RT-PCR টেস্ট
এই পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত RNA এর পরিবর্ধন করার মাধ্যমে ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয় 



 ইহা দুইটি ধাপে সম্পন্ন করা হয় প্রথম ধাপকে বলে রিভার্স ট্র্যান্সক্রিপশন এবং দ্বিতীয় ধাপকে বলে পলিমারেজ চেইন রিয়্যাকশন পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে তৈরি নরম রাবারের ঢাকনাযুক্ত টিউব ব্যবহার করা হয়
() প্রথম ধাপে ঢাকনাযুক্ত টিউবে রোগী থেকে সংগ্রহ করা নমুনা নেয়া হয় এখানে নমুনা বলতে আক্রান্ত রোগীর সর্দি অথবা কফ/থুথু বুঝানো হয়েছে তারপর এতে যোগ করা হয় অলিগো(ডিটি) অথবা ্যান্ডম প্রাইমার, রিভার্স ট্র্যান্সক্রিপটেজ এবং থার্মোস্ট্যাবল ডিএনএ পলিমারেজ মিশ্রণ রিভার্স ট্র্যান্সক্রিপশন বাফার উক্ত দ্রবণটি মুখবন্ধ অবস্থায় রেখে দিলে ১৫ মিনিটের মধ্যে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন রিয়াকশন শুরু হয় এবং নমুনাতে ভাইরাসের RNA এর প্রতিরূপ DNA বা Complementary DNA (cDNA) তৈরি হয়
() দ্বিতীয় ধাপ হল পলিমারেজ চেইন রিয়্যাকশন (পিসিআর) এর আবার তিনটি প্রধান ধাপ রয়েছে এই ধাপে এসওয়াইবিআর গ্রিন তাকম্যান প্রোব এর মাধ্যমে ডিএনএ এর রঞ্জন প্রশস্তকরণ প্রক্রিয়া চলে
প্রথম ধাপকে বলা হয় ডিন্যাচারেশন এই ধাপে cDNA কে নতুন একটি টিউবে নেওয়া হয় এর মধ্যে ডিএনএ পলিমারেজ যোগ করে ইনকিউবেটরে রাখা হয় ইনকিউবেটর বলতে মুরগীর ডিম তা দেওয়ার ইনকিউবেটর নয়, এটি পিসিআর পরীক্ষার জন্য বিশেষায়িত যন্ত্র ইনকিউবেটরের তাপমাত্রা ৯৫ সেলসিয়াস নির্ধারণ করা হয় এতে ডবল স্ট্রান্ড cDNA ভেঙ্গে Single strand হয়ে যায়
দ্বিতীয় ধাপকে বলা হয় অ্যানিলিং এই ধাপে পিসিআর প্রাইমার যোগ করে সেলিসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হয় উক্ত তাপমাত্রায় হাইব্রিডাইজেশন ঘটে এবং ডিএনএর পুণঃগঠন শুরু হয়
তৃতীয় ধাপকে বলে এক্সটেনশন এই ধাপে উক্ত মিশ্রণে থার্মোস্ট্যাবল ডিএনএ পলিমারেজ পিসিআর বাফার যোগ করে ইনকিউবেটরে রেখে দেয়া হয় ৭০-৭২ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে দেয়া হয় এই তাপমাত্রায় পিসিআর রিয়াকশন দ্রুত হয়
চূড়ান্ত ধাপে ডবল স্ট্রান্ডেড ডিএনএ সংশ্লেষন হলে এসওয়াইবিআর গ্রিন (SYBR Green) এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় এবং নির্দিষ্ট রং এর আধিক্য দেখা যায় এবং ডিএনএ এর উপস্থিতি নিরূপিত হয় অর্থাৎ পরীক্ষায় পজিটিভ ফল পাওয়া গেছে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এই পরীক্ষার জন্য যে রি-এজেন্টগুলো ব্যবহার করা হয় তা নির্দিষ্ট মাত্রায় প্যাকিং করে একটি বক্সে ভাইরাস আইডেন্টিফিকেশন কিট হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন কোম্পানী বিভিন্ন নামে বাজারজাত করে থাকেন যেমন- জার্মান কোম্পানী QIAamp viral RNA mini kit নামে বাজারজাত করেন তবে এই পিসিআর পরীক্ষা একটি মা্ত্র ধাপেও করা যায়, সেক্ষেত্রে সকল রি-এজেন্টগুলো নমুনা একই টিউবে পর্যায়ক্রমে যোগ করা হয় এবং নির্দিষ্ট জিনের জন্য নির্দিষ্ট প্রাইমার যোগ করা হয়
এই কিটগুলো দিয়ে ভাইরাল আরএনএ এর উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়, রোগ সনাক্তকরণ নয় রোগের কারন হিসেবে ভাইরাসের উপস্থিতিকে দায়ী করা হয় মাত্র
ভাইরাসের উপস্থিতি যেহেতু নির্ণয় হলো, তাহলে এবার ভাইরাসের আকৃতি প্রকৃতি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক
গঠন আকৃতি
করোনা ভাইরাস একটি বহুরূপী গোলাকার জীবানু এর বাইরের ত্বকে বহু বাল্বের ন্যায় প্রলম্বিত অঙ্গ রয়েছে যাকে পেপ্লোমার (Peplomer) বলে পেপ্লোমার গ্লাইকোপ্রোটিন নির্মিত গ্লাইকোপ্রোটিন পোষক কোষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে (ইমিউন সিস্টেম) ফাঁকি দিয়ে রিসেপ্টর অঙ্গ খুজে বের করে 




 পোষক দেহের কোষ আবরণী ভাইরাসের এনভেলপ মিশে একাকার হয়ে যায় এবং আরএনএ পোষক কোষে প্রবেশ করে  পেপ্লোমারের আকার ২০ ন্যানোমিটার ভাইরাসটির গড় ব্যাস ১২০ ন্যানোমিটার এর বাইরের আবরণকে এনভেলপ বলে এর ব্যাস ৮০ ন্যানোমিটার ভাইরাসের এনভেলপদ্বি-স্তর বিশিষ্ট লিপিড নির্মিত ভাইরাসের জীবনচক্রের পোষক কোষে থাকাকালীন সময় পোষকের কোষ আবরনী থেকে উৎপন্ন ফসফোলিপিড প্রোটিন এবং ভাইরাসের কিছু গ্লাইকোপ্রোটিন সমন্বয়ে এনভেলপ তৈরি হয় এনভেলপ লিপিড নির্মিত বিধায় এই ভাইরাস খুব দ্রুত শুষ্ক হয়ে মৃত্যুবরণ করে এবং এরা তাপ ডিটার্জেন্ট এর প্রতি খুবই সংবেদনশীল হওয়ায় আমরা সহজেই আমাদের ত্বক পোশাক জীবানুমুক্ত করতে পারি
ভাইরাসটির বাইরের আবরণ বা এনভেলপে থাকে মেমব্রেন প্রোটিন, এনভেলপ প্রোটিন, পেপ্লোমার এবং পেপ্লোমার এর চেয়ে একটু ছোট আকারের আরও এক প্রোটিন তার নাম হিম্যাগ্লুটিনিন এস্টারেজ (Hemagglutinin esterase) এই প্রোটিন পোষক কোষের প্রতি আগ্রাসী ভূমিকা পালন করে এবং পোষক কোষের কিছু এসিড রিসেপ্টরকে ধ্বংস করে
এনভেলপ এর অভ্যন্তরে থাকে নিওক্লিওক্যাপসিড বা নিওক্লিওপ্লাজমিড দ্বারা রক্ষিত সিঙ্গল স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ নিওক্লিওক্যাপসিড হলো একটি প্যাঁচানো খোলস যার অভ্যন্তরে ভাইরাসের আরএনএ থাকে নিওক্লিওক্যাপসিড নিওক্লিওক্যাপসিড প্রোটিন দ্বারা গঠিত
মেমব্রেন প্রোটিন এবং নিওক্লিওক্যাপসিড প্রোটিন ভাইরাসকে পোষক কোষের বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে
এবার মানুষের দেহের ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য করি আল্লাহ তার কোনো জীবকেই অসহায় করে সৃষ্টি করেননি এই পৃথিবীতে তাকে তার নিজের রক্ষক হিসেবেও সৃষ্টি করেছেন অর্থাৎ প্রতিটি জীব তার নিজেকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রক্ষা করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন আসলে একটি জীব শুধুমাত্র একটি জীবন নয়, একটি জীবন ব্যবস্থা একজন মানুষ শুধুমাত্র একটি জীব নয়, একটি জীবন ব্যবস্থা একজন মানুষের এক মুহুর্তের বেচে থাকার মধ্যে রয়েছে কোটি কোটি জীবনের ক্রিয়া একজন মানুষের দেহে রয়েছে কোটি কোটি কোষ প্রতিটি কোষে রয়েছে অগনিত অঙ্গানু অঙ্গানুগুলোর সম্মিলিত কাজের মাধ্যমে বেচে থাকে একটি কোষ আর কোটি কোটি কোষের সম্মিলিত কাজের মাধ্যমে বেচে থাকে একটি অঙ্গ সকল অঙ্গের সম্মিলিত কাজের মাধ্যমে চলে একটি জীবন ব্যবস্থা একটি জীবন একটি মানুষ
মানুষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
দেহের বাইরে থেকে আসা যেকোনো ক্ষতিকর বস্তুকে ধ্বংস বা প্রতিরোধ করে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সঠিকভাবে ক্রিয়াশীল দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেহের প্রতি হুমকিস্বরূপ যেকোনো বস্তুকে (যেমন- ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী ইত্যাদি) সনাক্ত করে তার বিরোদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট লিম্ফ সিস্টেম বা লসিকানালী তন্ত্র এই তন্ত্র রক্ত সংবহন তন্ত্রের মতোই লসিকানালী দ্বারা মানবদেহের সর্বত্র জালের ন্যায় বিস্তৃত এই তন্ত্রের অন্তর্ভূক্ত অঙ্গ অস্থিমজ্জা, প্লিহা, থাইমাস লিম্ফ নোড লসিকানালীর মাধ্যমে সারা দেহে লসিকা বা রক্তরস পরিবহন হয় লসিকার মাধ্যমে দেহের উৎপন্ন অপ্রয়োজনীয় পদার্থ পরিবাহিত হয় এবং রেচন অঙ্গের মাধমে তা দেহের বাহিরে নিসৃত হয় অস্থিমজ্জা থেকে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয় দেহের প্রতিরক্ষাকারী লিউকোসাইট এই অস্থিমজ্জা থেকে তৈরি হয় আর অন্যান্য লিম্ফ অঙ্গানু থেকে লিম্ফোসাইট তৈরি হয় যা লিউকোসাইটের সাবটাইপ লিউকোসাইট এন্টিবডি তৈরি করে যা সরাসরি দেহে প্রবেশকারী অবাঞ্চিত বস্তুকে নিষ্ক্রিয় ধ্বংস করে দেহকে রোগ থেকে রক্ষা করে আবার লিউকোসাইটের আরো সাবটাইপ নিউট্রোফিল, ম্যাক্রোফেইজ সরাসরি দেহে প্রবেশকারী যেকোনো ক্ষতিকর বস্তুকে গিলে হজম করে ফেলে দেহকে নিরাপত্তা দানকারী এই সেলগুলোকে সারাদেহে বিচরণের জন্য শক্তির প্রয়োজন আর এই শক্তি আসে হৃদপিন্ডের, রক্তনালীর এবং লিম্ফ নালীর সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে এইসব অঙ্গের সংকোচন প্রসারণের জন্য দায়ী এক ধরনের পেশী আর এই পেশীকে সংকোচিত করে এনজিওটেনসিন টু (angiotensin II) নামে এক ধরনের প্রোটিন এবং প্রসারিত করে এনজিওটেনসিন - (angiotensin 1-7) নামে আরেক ধরনের প্রোটিন এই প্রোটিন দুইটির একটি থেকে অন্যটিতে রূপান্তর করার মাধ্যমে দেহে এদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে দুইটি এনজাইম এনজিওটেনসিন কনর্ভাটার এনজাইম (ACE) এবং এনজিওটেনসিন কনর্ভাটার এনজাইম (ACE 2) এনজিওটেনসিন টু (angiotensin II) এর প্রভাবে রক্তনালীগুলোর সংকোচন ঘটে, নালীর ব্যাস কমে যায় ফলে রক্তের উপর চাপ পরে বেশি অর্থাৎ রক্তচাপ বেড়ে যায় আবার এনজিওটেনসিন - এর প্রভাবে রক্তনালীর প্রসারণ ঘটে, নালীগুলোর ব্যাস বেড়ে যায় ফলে রক্তের চাপও কমে যায় অর্থাৎ রক্তচাপ নিম্নগামী হয়
দেহের বিভিন্ন ধরনের কোষের মধ্যে কোনো কোনো কোষ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া বা অন্যকিছু দ্বারা আক্রমনের শিকার হলে অথবা কোষের কোনো ক্ষতি হলে কোষ সেই আক্রমনের প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে যাকে ইনফ্লামেশন বলে আক্রমন বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখানোকে সম্মিলিত ভাবে বলে ইনফেকশন ইনফেকশন হলে ইনফ্লামেশন প্রদর্শিত হয় ইনফ্লামেশন বলতে লাল হয়ে যাওয়া, স্ফীত হওয়া, দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া বা জ্বর, ব্যাথা ইত্যাদি
কোনো কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই কোষ হিস্টামিন, ব্রাডিকাইনিন প্রোস্টাগ্লান্ডিন ইত্যাদি তরল নিঃসরন করে এবং উক্ত তরল রক্তনালীকে ছিদ্র করে ফেলে এবং উক্ত ছিদ্র দিয়ে রক্তরস কোষে প্রবেশ করে ফলে কোষ স্ফীত হয় এতে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, ব্যাথা হয় এবং উক্ত স্থানের পেশী লাল হয়ে যায়
এবার SARS-CoV 2 ভাইরাস মানবদেহের যে অঙ্গে আক্রমন করে সেদিকে একটু দৃষ্টিপাত করা যাক এটি আক্রমন করে মানুষের শ্বাসযন্ত্রে
মানুষের শ্বাসযন্ত্র
শ্বাসযন্ত্রের অন্তর্ভূক্ত হলো নাক, শ্বাসনালী ফুসফুস ফুসফুসের শেষ প্রান্তে থাকে অ্যালভিউলাস 




 অ্যালভিউলাস হলো বেলুন আকৃতির ক্ষুদ্র বায়ুকুঠুরী বাইরের পরিবেশ থেকে শ্বাস গ্রহণের সময় এই অ্যালভিউলাস পর্যন্ত সরাসরি বাতাস আসে অ্যালভিউলাস এর আবরনীকে ঘিরে আছে ক্যাপিলারী ক্যাপিলারী হলো ধমনী এবং শিরার মিলনস্থল এখানে অ্যালভিউলাস থেকে রক্তের লোহিত কণিকা অক্সিজেন তুলে নেয় কার্বন ডাই অক্সাইড ছেড়ে যায় অ্যালভিউলাসের আবরনীতে দুই ধরনের কোষ রয়েছে টাইপ- কোষ যথেষ্ট পরিমান পাতলা যাতে সহজেই অক্সিজেন কার্বন ডাই অক্সাইড আদান প্রদান সম্পন্ন হয় টাইপ- কোষ সারফেকট্যান্ট নামে এক ধরনের তরল নিঃসরন করে যা অ্যালভিউলাসকে চুপসে যাওয়া থেকে রক্ষা করে 




 শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফুসফুসের সংকোচন প্রসারনের প্রয়োজন হয় এই সংকোচন প্রসারণ নিয়ন্ত্রণের জন্য টাইপ- কোষে রয়েছে এনজিওটেনসিন কনর্ভাটার এনজাইম (ACE) এবং এনজিওটেনসিন কনর্ভাটার এনজাইম (ACE 2)
এখন দেখা যাক SARS-Cov 19 মানুষের শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করার পর যা যা ঘটে
ভাইরাস আক্রমনের পর ফুসফুসে যা ঘটে
নাক, মুখ চোখের মধ্যদিয়ে সার্স-কভ ১৯ ভাইরাসটি প্রবেশ করে অ্যালভিউলাসে চলে আসে অ্যালভিউলাসে এসে এর টাইপ- কোষের ACE 2 এর সাথে বন্ধন সৃষ্টি করে এর ভিতরে প্রবেশ করে পর্যায়ে ভাইরাসের এনভেলপ টাইপ- কোষের আবরনীর সাথে মিশে যায় এবং ভাইরাসের আরএনএ কোষের ভিতরে প্রবেশ করে কোষকে অধিকারে নিয়ে নেয় ভাইরাসের আরএনএ এর প্রতিরূপ তৈরির জন্য অধিকৃত কোষকে নির্দেশ করে উক্ত কোষ ভাইরাসের আরএনএ এর অনুরূপ আরএনএ তৈরি করতে থাকে প্রক্রিয়াটি চলার কারনে অ্যালভিউলাসের টাইপ- কোষটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভাইরাসের প্রতিরূপ আরএনএগুলো উক্ত পোষক কোষকে ধ্বংস করে অন্য নতুন টাইপ- কোষকে আক্রমন করে তার সংখ্যা বাড়াতে থাকে ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষগুলো ধ্বংস হওয়ার আগে ইনফ্লামেশন সিগনাল হিসেবে ইনফ্লামেটরি ফ্লুইড নিঃসরন করে যা ক্যাপিলারীর নালীকে ছিদ্র করে এবং ছিদ্র দিয়ে প্রোটিন সমৃদ্ধ তরল ম্যাক্রোফেইজ আক্রান্ত স্থানে চলে আসে 




 ম্যাক্রোফেজ রক্তনালী থেকে অ্যালভিউলাসে এসে সাইটোকাইনেজ নিঃসরন করে ফলে ক্যাপিলারী থেকে আরও বেশি প্রতিরক্ষা কোষ, নিউট্রোফিল ম্যাক্রোফেইজ ভাইরাস আক্রান্ত স্থানে এসে পড়ে ইনফ্লামেটরি ফ্লুইডের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং তা সারফেকট্যান্টকে দ্রবীভূত করে ফেলে এতে অ্যালভিউলাস চুপসে যায় গ্যাসের আদান প্রদান হ্রাস প্রায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের নেওয়ার গতি বৃদ্ধি পায় ক্যাপিলারী থেকে আসা নিউট্রোফিল আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করে টাইপ- এবং টাইপ- কোষ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে আরো অধিক ইনফ্লামেটরি ফ্লুইড অ্যালভিউলাসে প্রবেশ করে এবং শুরু হয় চরম শ্বাসকষ্ট 




 প্রোটিন সমৃদ্ধ ইনফ্লামেটরি ফ্লুইড অনেক বেশি হলে তা রক্তের প্রবাহে চলে আসে এবং সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে অঙ্গ বিকল করার মাধ্যমে মৃত্যু ঘটায়
প্রতিকার
SARS-CoV 19 দ্বারা আক্রান্ত হলে এটি যেন অন্য কোনো মানুষের মধ্যে না ছড়ায় মানুষ হিসেবে এটাই একমাত্র করনীয় এর কোনো চিকিৎসা বা ঔষধ এখনও উদ্ভাবন হয়নি তাই নিজের দেহের ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাড়ানোই একমাত্র প্রতিকার এজন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে সামাজিক দূরত্ব বা কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব রেখে অন্য সবার থেকে আলাদা থাকতে হবে আলাদা কক্ষ, আলাদা টয়লেট এর ব্যবস্থা করতে হবে নিজের ব্যবহৃত জিনিস অন্যকে দেওয়া যাবে না অন্যের জিনিসপত্র স্পর্শ করা যাবে না প্রচুর পানিয় পান করতে হবে শ্বাসকষ্ট হলে হাসপাতালে ভেনটিলেশনের সুবিধা নিতে হবে শত কষ্ট ভোগ করার পর আয়ু না থাকলে অনিবার্য মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে
প্রতিরোধ
COVID-19 রোগের যেহেতু কোনো প্রতিকার নেই, তাই এর প্রতিরোধই একমাত্র ব্যবস্থা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ থেকে দুরে থাকুন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ি সরকার ঘোষিত লকডাউন মেনে চলুন বাড়িতে অবস্থান করুন অযথা বাইরে বের হবেন না জরুরী প্রয়োজন হলে মাস্ক ব্যবহার করে বাইরে বের হন কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলুন বাইরের কোনো কিছু স্পর্শ করলে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন ঘরের বাহিরে সকল কাজে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন জীবন মৃত্যু আল্লাহ হাতে তবে আপনার অসাবধানতা আপনার কষ্টের আক্ষেপের কারণ হতে পারে সবাই ভালো থাকুন ঘরে অবস্থান করুন যতক্ষণ না যুদ্ধের শেষ হয়। 


লেখাটা ভালো লাগলে প্লিজ আমার ব্লগটি Follow করুন। যদি আপনি আপনার ডিভাইসটি দিয়ে গুগল মেইলে সাইন ইন করে থাকেন তবে Simply এই পেইজের Follow বাটনে প্রেস করলেই হবে। আর সাইন ইন করা না থাকলে Follow বাটনে প্রেস করার পর আরেকটি পেইজ আসবে যেখানে আপনার gmail ID দিয়ে সাইন ইন করলেই Follow হয়ে যাবে।

No comments:

Post a Comment