আমরা মুসলিমরা যেমন মিলাদ মাহফিলে বসি, ঠিক তেমন এই অনুষ্ঠানে বসতে হয়। সামনে আগরবাতি জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। অনেকটা ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে এ অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়। তবে এটি ধর্মীয় কোনো অনুষ্ঠান বা তার কোনো বিকল্প নয়। এটি নিতান্তই স্কাউটদের একটি অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের একজন উপস্থাপক থাকলে অনুষ্ঠানটি সাজানো গোছানো হয়। ইউনিটের স্কাউটরা বসার বন্দোবস্ত করে অতিথিবৃন্দ ও ইউনিট লিডার মহোদয়কে অনুষ্ঠানে এসে বসার অনুরোধ করে। অনুষ্ঠানে ইউনিট লিডার সভাপতি থাকেন। যদি একাধিক ইউনিট লিডার থাকেন তবে গ্রুপ লিডার হন সভাপতি। সকলে আসন গ্রহণের পর উপস্থাপক সভাপতির নিকট অনুষ্ঠান শুরু করার অনুমতি নেন। “স্যার, আমি কি অনুষ্ঠান শুরু করতে পারি?” সভাপতি বলেন – “শুরু কর।” শুরু হয় অনুষ্ঠান।
উপস্থাপক : সম্মানিত উপস্থিতি, আস সালামু আলাইকুম। স্কাউটস ওন এর ব্যাখ্যা ও এর শুভ উদ্বোধন ঘোষনার জন্য অত্র ইউনিটের ইউনিট লিডার মহোদয়কে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।
ইউনিট লিডার : আস সালামু আলাইকুম। Ib k‡ãi A_© n‡”Q Dcjwä| ¯‹vDU cÖwZÁv I AvBb‡K cwic~Y©fv‡e Dcjwä Kivi Rb¨ GB Abyôvb| Bnv ¯‹vDU‡`i GKvš— wbR¯^ Abyôvb| Bnv †Kvb ag©xq Abyôvb bq ev a‡g©i †Kvb weKí bq| GB Abyôv‡bi gva¨‡g ag©xq gnvcyi“lM‡Yi Rxebx Av‡jvPbv Kiv nq| Zuv‡`i NUbveûj Rxe‡bi mv‡_ Kve I ¯‹vDU AvBb Ges ¯‹vDU AvBb I cÖwZÁvi wgj i‡q‡Q Ggb welq Dc¯’vcb Kiv nq|
G‡Z Zviv eyS‡Z cv‡i †h, mKj a‡g©i gbxlxM‡Yi Rxe‡bi mv‡_ ¯‹vDwUs Gi wgj i‡q‡Q| ¯‹vDwUs Gi g~j j¶¨ nj- wkï‡`i ˆ`wnK fv‡e mej, mvgvwRKfv‡e mKj Ae¯’vq gvwb‡q Pj‡Z m¶g, gnr I gvbwmKfv‡e D`vi, ag©xq w`K †_‡K m‡PZb, ˆbwZK w`K †_‡K Dন্নZ K‡i M‡o †Zvjv, hv‡Z Zviv GB eqm †_‡K Dল্লেwLZ ‰ewk‡ó¨ Af¨¯— n‡q eqe„w×i mv‡_ mv‡_ Rxe‡b Gi ev¯—e cÖwZdjb NUv‡Z cv‡i| আমরা যেন স্কাউটিং এর লক্ষ্যকে উপলব্ধি করে নিজেদের পরিচালিত করতে পারি এ প্রত্যাশা রেখে স্কাউটস ওন এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
উপস্থাপক : এখন কাক উপদলের সদস্য মালিহা সুলতানা পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করার জন্য আহবান করছি।
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১. যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
২. যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
৩. বিচার দিনের একমাত্র অধিপতি।
৪. আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
৫. আমাদের সরল পথ দেখাও।
৬. সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
উপস্থাপক : এখন কোকিল উপদলের সদস্য অর্পিতাকে গীতা পাঠ করার আহবান করছি।
উপস্থাপক : এখন কবুতর উপদলের সদস্য অহনাকে তার সুললিত কণ্ঠে একটি হামদে ইলাহী উপস্থাপন করার আহবান করছি।
হামদে ইলাহী
হে খোদা দয়াময় রহমান রহিম
হে খোদা দয়াময় রহমান রহিম
হে বিরাট, হে মহান, হে অনন্ত অসীম।।
নিখিল ধরণীর তুমি অধিপতি
তুমি নিত্য ও সত্য পবিত্র অতি
চির অন্ধকারের তুমি ধ্রুব- জ্যোতি
তুমি সুন্দর মঙ্গল মহামহিম।।
তুমি মুক্ত স্বাধীন বাধা-
বন্ধনহীন
তুমি এক তুমি অদ্বিতীয় চিরদিন
তুমি সৃজন- পালন- ধ্বংসকারী
তুমি অব্যয় অক্ষয় অন্ত- আদিম।।
আমি গুনাহগার পথ অন্ধকার
জ্বালো নুরের আলো নয়নে আমার
আমি চাইনা বিচার হাশরের দিন
চাই করুনা তোমারি ওগো হাকিম।।
উপস্থাপক : এখন হাঁস উপদলের সদস্য মোমেনা আসছে একটি উপাখ্যান নিয়ে।
উপাখ্যান ১
অনেক দিন আগের কথা। আরব দেশে তখন শান্তি ছিল না। মানুষে মানুষে হানাহানি চলত। অন্যায়-অবিচারে দেশ ভরে গিয়েছিল। সৃষ্টির কথা, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কথা মানুষ ভুলে গিয়েছিল। দেশ ও দেশের মানুষ এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়। পৃথিবী চায় সত্য ও ন্যায়ের একজন পথ প্রদর্শক। যিনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করবেন। অসত্য ও অন্যায়কে ঘৃণা করবেন। যিনি ভাববেন সৃষ্টির কথা, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কথা।
পরম করুণাময় আল্লাহ তা’লার দরবারে আবেদন মঞ্জুর হল। এল সেই আনন্দময় মূহুর্ত।
রাতের শেষ প্রহর। চারদিকে আবছা অন্ধকার। ঘুমজাগা পাখিরা ডানা ঝাপটে ওঠে। মরু প্রান্তরে হাওয়ার মাতামাতি। খেজুর পাতায় সে হাওয়ার কাঁপন লাগে। একটু পরেই আলো ফুটবে। সে এক অপরূপ দৃশ্য। সেই শুভক্ষণে একটি শিশুর জন্ম হল। দিনটি ছিল সোমবার, আরবি বছরের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল এর ১২ তারিখ, ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ। শিশুর মাতার নাম আমিনা। পিতার নাম আবদুল্লাহ। পিতামহের নাম আবদুল মুত্তালিব। শিশুটির জন্মের প্রায় ছয় মাস আগে তাঁর পিতা মারা যান। শৈশবে শিশুটিকে লালন-পালন করেন যে মহিলা তাঁর নাম বিবি হালিমা। বিবি হালিমা মায়ের মত আদরে ও যত্নে শিশুটিকে বড় করে তোলেন। শিশুটি বড় হওয়ার পরও বিবি হালিমাকে মনে রেখেছিলেন। দেখা যায় যে, তিনি তাঁর সাথীদের নিয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনায় রয়েছেন এমন সময় বিবি হালিমা সেখানে হাজির হলেন।
তিনি নিজের মাথার পাগড়ি বিছিয়ে বিবি হালিমাকে বসতে দিতেন। গভীর মমতায় তাঁকে মা বলে ডাকতেন।
বন্ধুরা বলত এই মহান ব্যক্তিটি কে? যাঁর আগমনের অপেক্ষায় উতলা ছিল নিখিল ধরণী। যিনি তাঁর শৈশবের লালন-পালনকারিণীকে জননীর মত শ্রদ্ধা করতেন।
হ্যাঁ, তিনি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স)।
‘স্কাউট বিনয়ী ও অনুগত’ এই স্কাউট আইনটির সাথে উপাখ্যানটির সম্পর্ক রয়েছে।
উপস্থাপক : এখন কোকিল উপদলের সদস্য শুক্লা বড়ুয়াকে তার সুললিত কণ্ঠে ত্রিপিটক থেকে পাঠ উপস্থাপন করার আহবান করছি।
ত্রিপিটক পাঠ:
যখন আমরা মনের রূপান্তর ঘটাই, আর চিন্তাগুলো বিশুদ্ধ করি, তখন আমরা অন্যায় কাজ থেকে জীবনকে পরিশুদ্ধ করি। এর মাধ্যমে খারাপ কাজের চিহ্নও মুঁছে যায়। যেমনভাবে একটা মোমবাতি আগুন ছাড়া নিজে জ্বলতে পারেনা, ঠিক সেইরকমই একটা মানুষ আধ্যাত্মিক জীবন ছাড়া বাঁচতে পারেনা।”
(বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি। ধম্মং শরণং গচ্ছামি। সংঘং শরণং গচ্ছামি।)
উপস্থাপক : এখন কাক উপদলের সদস্য শাহানাকে তার মিষ্টি কণ্ঠে একটি নাতে রাসুল উপস্থাপন করার আহবান করছি।
নাতে রাসুল :
ত্রিভুবনের প্রিয়
মুহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়।
আয় রে সাগর আকাশ বাতাস দেখ্বি যদি আয়।।
ধূলির ধরা বেহেশ্তে আজ,
জয় করিল
দিল রে লাজ।
আজকে খুশির ঢল নেমেছে ধূসর সাহারায়।।
দেখ্ আমিনা মায়ের
কোলে,
দোলে শিশু ইসলাম দোলে।
কচি মুখে শাহাদাতের বাণী সে শোনায়।।
আজকে যত পাপী ও তাপী,
সব গুনাহের পেল মাফী।
দুনিয়া হতে
বে-ইনসাফী জুলুম নিল বিদায়।।
নিখিল দরুদ পড়ে লয়ে
নাম,
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া
সাল্লাম।
জীন পরী ফেরেশ্তা সালাম জানায় নবীর পায়।।
উপস্থাপক : এখন কবুতর উপদলের সদস্য মোনালিসাকে একটি উপখ্যান উপাস্থাপন করার আহবান করছি।
উপাখ্যান ২
অনেক দিন আগের কথা। আরব দেশ। সে দেশের একটি বড় নগরী মক্কা। এ নগরীর একটি মসজিদে রোজ খুব সকালে এক মহান ব্যক্তি নামায পড়তে যান। আর এক বুড়ী রোজ তাঁর পথে কাঁটা পুঁতে রাখেন । লোকটিকে কষ্ট দেওয়াই তার ইচ্ছা। কিন্তু লোকটি প্রতিদিন পথের কাঁটা সরিয়ে দেন। বুড়ীকে কিছুই বলেন না। বরং হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে দেখেন। দুষ্ট বুড়ীও দূর থেকে তা দেখেন আর হাসেন ।
একদিনের কথা। প্রতিদিনের মত লোকটি সকালে মসজিদে নামায আদায় করতে যাচ্ছেন ।
দেখলেন, পথে কাঁটা নেই। ভাবলেন কেন এমন হল? নিশ্চয় বুড়ীর অসুখ-বিসুখ হয়েছে। তিনি নামায পড়ে ফেরার পথে বুড়ীর খোঁজ করলেন। জানা গেল, কাছেই বুড়ীর বাড়ি। তিনি বুড়ীর বাড়িতে গেলেন। বাড়িতে গিয়ে দেখলেন, জ্বরের ঘোরে বুড়ী কাতরাচ্ছেন। তাকে দেখবার কেউ নেই। বিছানায় শুয়ে বুড়ি ছটপট করছেন।
লোকটি বুড়ীর বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। বললেন, মা, অসুখে বড় কষ্ট হচ্ছে আপনার। তারপর অসুস্থ বুড়ীর সেবায় লেগে গেলেন। তার বিছানা পরিষ্কার করে দিলেন। তাকে ঔষধ-পথ্য খেতে দিলেন।ধীরে ধীরে বুড়ী সেরে উঠলেন।
বুড়ীর বিস্ময়ের শেষ নেই। লোকটিকে তিনি পরম শত্রু বলেই জানেন। কিন্তু আজ এ কি হল?
শত্রু তাকে সেবা করছে। বিপদে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বুড়ী বুঝতে পারলেন লোকটি কত উদার, কত মহান। বুড়ী বুঝতে পারলেন লোকটির মহানুভবতা। কৃতজ্ঞতায় বুড়ীর অন্তর ভরে উঠল।
বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ কে এই মহানুভব ব্যক্তি, যিনি ছিলেন সকলের বন্ধু ।
তিনি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) ।
‘স্কাউট সকলের বন্ধু’- এই স্কাউট আইনের সাথে উপাখ্যানটি সম্পর্কযুক্ত।
উপস্থাপক : এখন অত্র ইউনিটের ইউনিট লিডার মহোদয় স্কাউট আইন পাঠ করবেন। স্যার আপনাকে স্কাউট আইন পাঠ করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।
স্কাউট আইন পাঠ :
স্কাউট আইন ৭টি:
১) স্কাউট আত্মমর্যাদায় বিশ্বাসী
২) স্কাউট সকলের বন্ধু
৩) স্কাউট বিনয়ী ও অনুগত
৪) স্কাউট জীবের প্রতি সদয়
৫) স্কাউট সদা প্রফুল্ল
৬) স্কাউট মিতব্যয়ী
৭) স্কাউট চিন্তা, কথা ও কাজে নির্মল।
উপস্থাপক : এখন কাক উপদলের সদস্য প্রভা একটি ভক্তিমূলক গাণ পরিবেশন করবে। আমি তোমাকে তোমার পরিবেশনা শুরু করার আহবান করছি।
ভক্তিমুলক গান:
দে দে পাল তুলে দে মাঝি হেলা করিস না
ছেড়ে দে নৌকা আমি যাবো মদিনা।।
দুনিয়ায় নবী এলো মা আমিনার ঘরে
হাসিলে হাজার মানিক কাঁদিলে মুক্তা ঝড়ে।।
ও দয়াল মুর্শিদ যার সখা তার কিসের ভাবনা
আমার হৃদয় মাঝে কাবা নয়নে মদিনা।।
ও নূরের রৌশনীতে দুনিয়া গেছে ভরে
সে নূরের বাতি জ্বলে মদিনার ঘরে ঘরে।।
দয়াল মুর্শিদ যার সখা তার কিসের ভাবনা
আমার হৃদয় মাঝে কাবা নয়নে মদিনা।।
দে দে পাল তুলে দে মাঝি হেলা করিস না
ছেড়ে দে নৌকা আমি যাবো মদিনা।।
উপস্থাপক : এখন কোকিল উপদলের সদস্য জয়ন্তি একটি উপাখ্যান পরিবেশন করবে। আমি তোমাকে তোমার পরিবেশনা শুরু করার আহবান করছি।
উপাখ্যান ৩ :
হিমালয় নামে একটি পর্বত আছে। তা আমরা সবাই জানি। এই হিমালয়ের গা ঘেষে বয়ে চলেছে রোহিনী নদী। সে অনেক দিন আগের কথা। এই রোহিনী নদীর তীরে একটি সুন্দর নগর ছিল। নাম কপিলবাস্তু। অবশ্য কেউ কেউ একে কপিলাবস্তুও বলে থাকেন। শাক্য বংশের রাজারা এখানে রাজত্ব করতেন। নগরে ছিল একটি মনোরম বাগান। একদিনের কথা। বালক-রাজকুমার বাগানে বসে আছেন। ধীরে ধীরে বাতাস বইছে। নীরব প্রকৃতি। গাছে গাছে ফুলের সমারোহ। মৌমাছি ফুলে ফুলে উড়ে যাচ্ছে।
আর বাগানের উপর দিয়ে সাদা মেঘের মত দলে দলে রাজহাঁস উড়ে যাচ্ছে। সে কী আনন্দ! রাজকুমার এ দেখে দেখে কী যেন ভাবছেন। হঠাৎ তাঁর পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ল একটি রাজহাঁস। ছটপট করছে। তিনি হাঁসটিকে ধরে দেখলেন, বুকে একটি তীর বিঁধে আছে। তাঁর খুব দুঃখ হল। তিনি পরম যত্নে তীরটি খুললেন। হাঁসটির সেবা করলেন। হাঁসটি কিছুটা সুস্থ হল। তিনি হাত বুলিয়ে হাঁসটিকে আদর করছেন। হাঁসটি তাঁর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ভয়ে মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে। এমন সময় রাজকুমারের কাছে এল দেবদত্ত। দেবদত্ত রাজকুমারের খুড়তুতো ভাই হলেও খেলার সাথী। এসেই বলল, “হাঁসটি আমাকে দাও। এই হাঁস আমার। আমি এটিকে মেরেছি।”
দয়ায় একেবারে কাতর হয়ে রাজকুমার বললেন, “ভাই দেবদত্ত, হাঁসটি যদি মরে যেত তা হলে তোমাকে দিতাম। হাঁসটি মরে নি, আহত হয়েছে মাত্র । আর আমি তার জীবন রক্ষা করেছি। তাই হাঁসটি আমার।” এসব কথা শুনেও যখন দেবদত্ত হাঁসের দাবী ছাড়লে না তখন তিনি আরও বললেন, “ভাই দেবদত্ত, তোমারও প্রাণ আছে। তুমি কি পরে দুঃখ বোঝ না? তুমি এই হাঁসটির বিনিময়ে আমার রাজ্য নিতে পারো, তবুও প্রাণ থাকতে আমি হাঁসটি দেবো না।” অতঃপর হাঁসটিকে তিনি আকাশে উড়িয়ে দিলেন। হাঁসটি উড়ে গেল।
বন্ধুরা বলতো এই রাজকুমারের নাম কি? হ্যাঁ, তিনি সিদ্ধার্থ। তাঁর আর এক নাম- গৌতম। যিনি পরবর্তী সময়ে বোধি লাভ করে হন বুদ্ধ। নবম অবতার । ভগবান গৌতম বুদ্ধ। তাঁর প্রবর্তিত ধর্মমতই জগতে বৌদ্ধধর্ম নামে পরিচিত।
“স্কাউট জীবের প্রতি সদয়”-এই স্কাউট আইনের সাথেও এটি সম্পর্কযুক্ত।
উপস্থাপক : এখন কবুতর উপদলের সদস্য ডেভিটকে পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করার আহবান করছি।
পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ :
নিউ টেস্টামেন্টের ম্যাথিউসের সুসমাচারের পঞ্চম অধ্যায়ের চুয়াল্লিশ সংখ্যক আয়াত পাঠ করছি।
কিন্তু আমি আপনাকে বলছি: আপনার শত্রুদের ভালবাসুন, যারা আপনাকে অভিশাপ দেয় তাদের আশীর্বাদ করুন, যারা আপনাকে ঘৃণা করে তাদের জন্য ভাল করুন এবং যারা আপনাকে বিরক্ত করে এবং আপনাকে তাড়না করে তাদের জন্য প্রার্থনা করুন।
উপস্থাপক : এখন একটি উপাখ্যান। উপাখ্যান নিয়ে আসছে হাঁস উপদলের সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস।
উপাখ্যান ৪:
আল্লাহর রাসুল। আল্লাহ তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটির কোরবানি চেয়েছেন। তিনি আল্লাহর সিন্তুষ্টির জন্য একশত উট, একশত দুম্বা জবাই করেছেন। কিন্তু তাতেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়নি। অনেক ভেবে তিনি দেখলেন যে, তাঁর সবচেয়ে প্রিয় তাঁর একমাত্র পুত্র।তিনি ঠিক করলেন আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালন করতে নিজের ছেলেকেই কোরবানী দেবেন।ছেলেকে হাত-পা বেঁধে শুইয়ে রেখে নিজের চোখ বেঁধে ছেলেকে জবাই করলেন। আল্লাহ তাঁর তাকওয়া দেখে সন্তুষ্ট হয়ে কোরবানী কবুল করলেন। ছেলের পরিবর্তে একটি পশু কোরবানী কবুল করলেন।
তিনি চোখ খুলে দেখলেন একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে গেছে। ছেলে তাঁর পেছনে দাড়িয়ে আছেন। পিতার এই মহান ত্যাগের জন্য তিনি মুসলিম জাতীর পিতা হিসেবে পরিচিত।
বন্ধুরা, তোমরা কি কেউ বলতে পারবে, তিনি কে?
তিনি হলেন মুসলিম জাতীর পিতা ইব্রাহীম (খালিল্লাহ)। এই উপাখ্যানের সাথে স্কাউট প্রতিজ্ঞার প্রথম অংশ “আল্লাহ ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন” অংশের সাথে মিল রয়েছে।
উপস্থাপক : এখন কাক উপদলের সদস্য মিনতি তার সুমিষ্ট কণ্ঠে একটি কীর্তন পরিবেশনা নিয়ে আসছে। মিনতি তোমাকে তোমার পরিবেশনা শুরু করার আহবান করছি।
কীর্তন :
অঙ্গ পুলকিত, মরম সহিত,
অঝরে নয়ন ঝরে।
বুঝি অনুমানি, কালা রূপ খানি,
তোমারে করিয়া ভোরে।।
দেখি নানা দশা, অঙ্গ যে বিবশা,
নাহত এত বড় ভারে।
সে বর নাগর,
গুণের সাগর,
কিবা না করিতে পারে।।
শুন শুন রাই, কহি তুয়া ঠাঁই,
ভাল না দেখি যে তোরে।
সতী কুলবতী, তুয়া যে খেয়াতি,
আছয় গোকুল পুরে।।
ইহাতে এখন, দেখি যে কেমন,
নাহি লাজ গুরুতরে।
কহে চণ্ডীদাসে, শ্যাম নব রসে,
বুঝিলে বুঝিতে নারে।।
উপস্থাপক : একে একে উপদল ভিত্তিক পরিবেশনা গুলো শেষ হলো। ইউনিট লিডার স্যার আপনাকে প্রতিজ্ঞা পুনঃপাঠ ও স্কাউটস ওন এর মূল্যায়নের মাধ্যমে আজকের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণার বিনীত অনুরোধ করছি।
প্রতিজ্ঞা পুনঃপাঠ :
অনুষ্ঠানে উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা আপনাদের সকলকেই উঠে দাড়ানোর অনুরোধ করছি। যারা দীক্ষাপ্রাপ্ত নন তারা শুধু দাঁড়িয়ে থাকবেন আর যারা দীক্ষাপ্রাপ্ত তারা স্কাউট চিহ্ন দেখান এবং আমার সাথে বলুন -
সবাই বসে পড়ুন।
স্কাউটস ওন এর মূল্যায়ন :
উপদল ভিত্তিক বিভিন্ন পরিবেশনাগুলো ছিল অত্যন্ত মনোমুদ্ধকর। বিশেষ করে কুরআন তিলাওয়াত, হামদ, নাত, ভক্তিমূলক গান, কীর্তন, উপাখ্যান উপস্থাপনা অত্যন্ত সুন্দর। স্কাউটস ওন সফলভাবে সম্পন্ন করা এবং ভাব-গাম্ভীর্য বজায় রাখার জন্য উপস্থিত সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনারা সকলেই আপনাদের নিজের নিজের ধর্মের বাণী ২ মিনিট নিরবে উচ্চারণ করুন। ...
আমি ওন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করছি।
উপস্থাপক : দয়া করে আপনারা সবাই বসুন। মিষ্টির ব্যবস্থা আছে। আপনারা মিষ্টি নিয়ে যাবেন।
মিষ্টি বিতরণ
No comments:
Post a Comment