ঘামঝরাঃ স্বাভাবিক, অল্প অথবা অতিরিক্ত, স্বাস্থ্যঝুকি, প্রতিকার !
ঘাম ঝরা একটি শারীরিক ক্রিয়া যা দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ঘর্মগ্রন্থি থেকে নিঃসরিত লবনঘটিত তরলই হলো ঘাম। দেহের তাপমাত্রার পরিবর্তন, বাইরের তাপমাত্রা, আবেগিক অবস্থা ইত্যাদি ঘাম ঝরার কারন। ঘাম ঝরার সবচেয়ে সাধারণ স্থানগুলো হলো-
- বগল
- মুখোমন্ডল
- হাতের তালু ও
- পায়ের তলা।
স্বাভাবিক পরিমানে ঘাম ঝরা দেহের একটি অত্যাবশ্যকীয় ক্রিয়া। ঘামের অনুপস্থিতি বিপদজনক হতে পারে কারন তা দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার ঝুকি বাড়ায়। অত্যাধিক ঘাম ঝরা মানসিক ক্ষতির কারন হতে পারে।
যেভাবে ঘাম ঝরেঃ
মানুষের দেহে গড়ে তিন মিলিয়ন ঘর্মগ্রন্থি আছে। এরা দুই ধরনের-
- ইক্রাইন গ্রন্থি এবং
- অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থি।
ইক্রাইন গ্রন্থিগুলো দেহের সর্বত্র বিরাজমান এবং হালকা ওজনের গন্ধহীন ঘাম নিঃসরন করে।
অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থিগুলো Hair follicle এর সাথে যুক্ত এবং মাথায়, বগলে, জননাঙ্গের চারপাশে অধিক পরিমাণে থাকে। এই গ্রন্থি অপেক্ষাকৃত ভারী, গন্ধযুক্ত ও চর্বিযুক্ত ঘাম নিঃসরন করে। সিবেসিয়াস গ্রন্থি বা তৈলগ্রন্থিও Hair follicle এর সাথে যুক্ত থাকে বলে এ গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন সিবাম বা তেল ঘামের সাথে মিশে ঘামকে আরো ভারী ও গন্ধযুক্ত করে। আর এই তেলযুক্ত ঘাম এপিডার্মিসের তলে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এলে ঘামের বিভিন্ন উপাদানগুলোকে ভেঙ্গে ফেলে। এতে আরো দুর্গন্ধ নিঃসরিত হয়।
ঘাম ঝরা ক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় দেহের সয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে এবং মানুষের মনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
যখন আবহাওয়া উষ্ণ হয় অথবা জ্বর বা অন্য কারনে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তখন ঘর্মগ্রন্থি তার নালীর মাধ্যমে ত্বকে ঘাম নিঃসরণ করে। ইহা দেহতলকে আর্দ্র করে এবং ঘাম শুকিয়ে গেলে মানুষ স্নিগ্ধতা অনুভব করে। ঘামের বেশির ভাগই পানি। কিন্তু প্রায় ১% ঘাম লবন ও চর্বি মিশ্রিত থাকে।
ঘাম ঝরার কারণঃ
প্রতিটি প্রাণীর দেহে ঘাম ঝরা একটি স্বাভাবিক ও দৈনিক ক্রিয়া। তথাপি আরো অনেক কারন রয়েছে যা ঘাম ঝরাকে তরান্বিত করে।
উচ্চ তাপমাত্রাঃ পরিবেশের অতি তাপমাত্রা প্রাথমিকভাবে বেশি ঘাম ঝরার কারণ।
আবেগ ও স্ট্রেসঃ নিম্নলিখিত আবেগিক ও স্ট্রেসের কারনে ঘাম ঝরার মাত্রা বেড়ে যায়-
- রাগ
- ভয়
- বিব্রতবোধ
- উদ্বিগ্নতা
- স্ট্রেস।
খাদ্যঃ অতিরিক্ত ঘামের জন্য কিছু খাদ্য দায়ী। যেমন-
- ঝাল ও মশলাদার খাবার
- সোডা, কফি ও চা ইত্যাদি পানীয়
- মদ্যজাত কোমল পানীয়।
ঔষধ গ্রহণ ও অসুস্থতাঃ ঔষধ সেবন ও অসুস্থতার জন্য ও ঘাম ঝরার পরিমাণ বাড়তে পারে। যেমন-
- ক্যান্সার
- জ্বর এবং জ্বর কমানোর ঔষধ
- রোগ সংক্রমন
- হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা নিম্ন ব্লাড সুগার লেভেল
- ব্যাথা নাশক। যেমন মরফিন।
- সিনথেটিক থাইরয়েড হরমোন
- হাত পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা।
ঘাম নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রার অভিযোজনঃ
ঘাম ঝরার পরিমান স্বাভাবিক থাকলে কোনো ঔষধ ব্যবহার বা চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিলে ঘাম ঝরার পরিমাণ হ্রাস পাবে এবং আরামদায়ক জীবনযাপন করা যাবে-
- হালকা স্তরের কাপড় পরিধান করতে হবে যাতে ত্বক পর্যাপ্ত বাতাস পায়।
- তাপমাত্রা বাড়ায় এমন কাপড়ের স্তর অপসারণ করতে হবে।
- মুখোমন্ডল ও দেহে শুকিয়ে যাওয়া ঘাম ধুয়ে ফেলতে হবে।
- ঘামে ভেজা পোশাক পরিবর্তন করতে হবে। এতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ ঝুকি কমবে।
- পানি ও তরল পানীয় পান করতে হবে যা ঘামের সাথে হারানো তরল ও ইলেকট্রোলাইটের ক্ষয় পূরণ করবে।
- বগলে দুন্গন্ধনাশক বা Deodorant ব্যবহার করতে হবে।
- ঘাম ঝরা বাড়ায় এমন খাদ্য পরিহার করতে হবে।
ঘাম ঝরায় সৃষ্ট জটিলতাঃ
ঘামের সাথে যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দেয় তবে সে সমস্যার জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন। লক্ষণগুলো হলো-
- বুক ব্যাথা
- অস্থিরতা
- দ্রুত শ্বাস
- কারণ ছাড়াই অনবরত ঘাম ঝরা
- অতিরিক্ত ঘামের কারণে দেহের ওজন কমতে থাকা।
অতিরিক্ত ঘাম ঝরা ও ঘাম না ঝরার কারনে নিম্নলিখিত অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত-
Hyperhidrosis: বগলে, হাতের তালু এবং পায়ের তলায় অতিরিক্ত ঘাম ঝরা যা খুবই বিব্রতকর।
Hypohidrosis: ঘাম না হওয়া। দেহের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার ফলে হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা।
No comments:
Post a Comment