উপাখ্যান
-১
আল্লাহর
রাসুল। আল্লাহ তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটির কোরবানি চেয়েছেন।
তিনি আল্লাহর সিন্তুষ্টির জন্য একশত উট, একশত দুম্বা জবাই করেছেন। কিন্তু তাতেও আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জন হয়নি। অনেক ভেবে তিনি দেখলেন যে, তাঁর সবচেয়ে প্রিয় তাঁর একমাত্র পুত্র।তিনি
ঠিক করলেন আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালন করতে নিজের ছেলেকেই কোরবানী দেবেন।ছেলেকে হাত-পা
বেঁধে শুইয়ে রেখে নিজের চোখ বেঁধে ছেলেকে জবাই করলেন। আল্লাহ তাঁর তাকওয়া দেখে সন্তুষ্ট
হয়ে কোরবানী কবুল করলেন। ছেলের পরিবর্তে একটি পশু কোরবানী কবুল করলেন। তিনি চোখ খুলে
দেখলেন একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে গেছে। ছেলে তাঁর পেছনে দাড়িয়ে আছেন। পিতার এই মহান
ত্যাগের জন্য তিনি মুসলিম জাতীর পিতা হিসেবে পরিচিত।
বন্ধুরা,
তোমরা কি কেউ বলতে পারবে, তিনি কে?
তিনি হলেন
মুসলিম জাতীর পিতা ইব্রাহীম (খালিল্লাহ)। এই উপাখ্যানের সাথে কাব প্রতিজ্ঞার প্রথম
অংশ “আল্লাহ ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন” অংশের সাথে মিল রয়েছে।
উপাখ্যান
– ২
শত্রুদের
প্রবেশ রোধ করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন শহরের চার পাশে পরিখা খনন। সাথীদের কয়েকটি দলে
ভাগ হয়ে কাজ শুরু করতে বললেন। তিনি নিজেও একটি দলে যুক্ত হলেন। সর্বপ্রথম তিনিই মাটির
ঝুরি মাথায় তুলে নিলেন। পরিখা খনন শুরু হল। শীঘ্রই পরিখা খনন শেষ হলো। শুত্রুদের হাত
থেকে শহর রক্ষা পেল। সকলের সাথে মিলে মিশে দেশের মানুষকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার
জন্য যিনি কাজ করলেন তিনি একজন মহামানব। সকল মহামানবের সর্দার। এই পৃথিবীর রহমত স্বরূপ।
বন্ধুরা,
তোমরা কি কেউ তাঁর নাম জানো?
তিনি হলেন
আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)।
এই উপাখ্যানটির
সাথে কাব প্রতিজ্ঞার প্রথম অংশ “আল্লাহ ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন” অংশের সাথে
মিল রয়েছে।
উপাখ্যান - ৩
ন্যায় পরায়ন,
ধর্মভীরু রাজা। বয়সের ভাড়ে ক্লান্ত। ঠিক করলেন তাঁর বড় পুত্রকে রাজা করবেন। বড় পুত্রও
বাবার মতোই ধর্মপ্রাণ। পিতৃআজ্ঞা পালনে নিজের জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। দিন তারিখ
ঠিক হল নতুন রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানের। কিন্তু বাধ সাধলেন ছোট রাণি। তিনি রাজার অসুস্থতার
সময় সেবা যত্ন করে খুশি করেছিলেন। রাজা খুশি হয়ে ছোট রাণিকে উপহার দিতে চাইলেন। ছোট
রাণি পরে সময় হলে চেয়ে নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। এখন তিনি সেই পুরস্কার চাইলেন।রাজা শুধালেন-
কি পুরস্কার চাও রাণি? ছোট রাণি উত্তর দিল- আপনার বড় পুত্রকে বনবাসে পাঠিয়ে আমার পুত্রকে
রাজা করুন। রাজা নিরুপায়। ছোট রাণির কথা না মেনে নিলে রাজার কথার সত্যতা থাকে না। তিনি
বড় পুত্রকে বনবাসে যাওয়ার আদেশ দিলেন। বড় পুত্র পিতার আদেশ পালন করতে স্ত্রীকে নিয়ে
বনবাসে চলে গেলেন। সঙ্গে গেলেন এক ভাই।
বন্ধুরা,
তোমরা কি কেউ বলতে পারবে, রাজার এই বড় পুত্রের নাম কী?
হ্যাঁ,
তাঁর নাম রাম চন্দ্র। তিনি পিতৃ আজ্ঞা পালন করতে বনবাসে গিয়েছিলেন। সাথে ছিলেন স্ত্রী
সীতা ও ভাই লক্ষ্মণ।
এই উপাখ্যানের
সাথে কাব আইনের “বড়দের কথা মেনে চলা” অংশের সাথে মিল রয়েছে।
উপাখ্যান
– ৪
জন্মের
আগেই বাবা মারা যান ছেলেটির। ছয় বছর বয়সে মাতাও পরলোক গমন করেন। এতিম ছেলে বড় হতে থাকেন
দাদার কাছে। কিছুদিন পর দাদাও মারা যান। তারপর থেকে ছেলেটিকে লালন পালন করেন তাঁরা
চাচা। তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দেখে এক খ্রিষ্টান পাদ্রি ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন যে, ছেলেটি
বড় হয়ে মহামানব হবেন। ছেলেটির চেহারায় নূরের জ্যোতি ফুটে উঠেছিল। ছেলেটি এক ধনী বিধবার
মেষ চড়ানোর কাজ করতেন। তাঁর নূরানী চেহারা দেখে মহিলাও বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি ছেলেটিকে
বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ছেলেটি নিজের খেয়ালে কিছু না করে তার চাচার সিদ্ধান্তের
অপেক্ষা করেন। চাচা বিচক্ষণতার সাথে প্রস্তাবটি বিবেচনা করে ছেলেটিকে বিয়ের পক্ষে মত
দেন। ছেলেটি চাচার মত জানার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ছেলেটি আল্লাহর রহমতে অনেক
সম্পদের মালিক হন। হন মহামানবদের সর্দার।
বন্ধুরা
তোমরা কি কেউ বলতে পারবে, এই ছেলেটির নাম কি?
ছেলেটি
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স)।
এই উপাখ্যানটির
সাথে কাব আইনের “নিজের খেয়ালে কিছু না করা” অংশের সাথে মিল রয়েছে।
উপাখ্যান
– ৫
মানব দরদী
বাদশা।প্রতি রাতে তিনি ছদ্মদেশ ধারণ করে তাঁর দেশের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াতেন। গরীব
দুঃখীর খোজ খবর নিতেন, সাহায্য করতেন। এক রাতে তিনি এক গোয়ালার বাড়ির কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
তিনি শুনতে পেলেন গোয়ালার মেয়ে তার মাকে দুধে পানি মেশাতে বারণ করছেন। খলিফার লোকজন
জানতে পারলে শাস্তি দেবেন বলে হুশিয়ারও করছেন।কিন্ত মা বলছেন- খলিফার লোকজন তো দেখছে
না। তখন মেয়েটি বললেন- খলিফার লোক না দেখুক, আল্লাহ তো দেখছেন। কোনো কিছুই তাঁর দৃষ্টির
বাইরে নয়। খলিফা সে রাতে বাড়ি চলে গেলেন। পরে তিনি এই গোয়ালার মেয়েটির সততা দেখে নিজের
পুত্রের সাথে মেয়েটির বিবাহ দিলেন।
বন্ধুরা,
তোমরা কি কেউ বলতে পারবে, এই পরোপকারী বাদশার নাম কী?
তিনি হলেন
খোলাফায়ে রাশেদিনের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা)। তাঁর চরিত্রের সাথে কাব প্রতিজ্ঞার “প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করতে” অংশের সাথে
মিল রয়েছে।